দীপাবলি কেন পালন করা হয় - পাঠা বলির ইতিহাস
দীপাবলি কেন পালন করা হয় তা সম্পর্কে জানার জন্য আপনি যদি আমাদের ওয়েবসাইটে এসে
থাকেন তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। দীপাবলি কেন পালন করা হয় তা সম্পর্কে এই
ওয়েবসাইটে খুব সুন্দরভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাই আপনি এই পোস্টটি ধৈর্য সহকারে
পড়লে বুঝতে পারবেন দীপাবলি কেন পালন করা হয়।
দীপাবলি উৎসব তিনদিনব্যাপী পালন করা হয়ে থাকে। প্রায় একটা বছর পরও আবার আসে
দিওয়ালি বা দীপাবলি উৎসব। তবে দীপাবলিটা শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিদের
জন্য উৎসব নয়। বরং সব ধর্মীয় ব্যক্তিরা এই উৎসব পালন করতে পারেন। দীপাবলিটা
মূলত হিন্দু ধর্মাবলীদের ৫ দিন ব্যাপী পালন করে থাকে। দীপাবলি কেন পালন করা হয়
তা সম্পর্কে বিস্তারিত চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ভূমিকা
দীপাবলি হচ্ছে একটা সংস্কৃত শব্দ। এই দীপাবলি শব্দের মধ্যে রয়েছে দুইটি শব্দ।
দীপা বা দ্বীপ শব্দের অর্থ হলো আলো আর অবলী শব্দের অর্থ হলো সারি। এখানে দুইটা
শব্দকে একসাথে অর্থ বলতে গেলে হয় "আলোর সারি"।
এই দীপাবলীর দিনে নতুন পোশাক পরা পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণের
প্রথা আছে। এই দিনে মানুষ তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে সন্ধ্যায় আলোকসজ্জা করে
তার মানে হচ্ছে প্রদীপ জ্বালায় দেবী লক্ষ্মী এবং প্রভু গণেশের পূজা করে থাকে।
তাহলে আর সময় নষ্ট না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক দীপাবলি কেন পালন করা হয় তার
সম্পর্কে বিস্তারিত।
দীপাবলি কেন পালন করা হয়
দীপাবলি
কেন পালন করা হয় তার সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে আগে জানতে হবে এই উৎসবটা ছোট
উৎসব নাকি বড় উৎসব? হ্যাঁ বন্ধুরা দীপাবলি উৎসবটা অনেক বড় একটা উৎসব। দেওয়ালি
বা দীপাবলি হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতি
বছর কার্তিক মাসের অমাবসায় দীপাবলি উৎসব পালিত হয়।
এই বছরে ২৪ এবং ২৫ অক্টোবর উভয় দিনেই আমাবস্যা থাকবে। কিন্তু ২৫ তারিখ দীপাবলি
পালন করা হয় না। তার বদলে করা হলো ২৪ তারিখ। এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক দীপাবলি
কেন পালন করা হয়। দীপাবলি নিয়ে পুরনো অথবা বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন কাহিনীর
বর্ণনা পাওয়া যায়।
তার মধ্যে হিন্দুদের কাছে রামায়ণের কাহিনীতে রামচন্দ্রের ১৪ বছর বনবাস কাটিয়ে
রাবনকে বধ করার পর সীতাকে নিয়ে অযথাই ফিরে এসে অযোধ্যা নগরীতে প্রদীপ জ্বেলে
দীপাবলি উদযাপন করার কাহিনী সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে আছে আমাদের মাঝে। এই
কারণেই আসলে দীপাবলি পালন করা হয়।
কালী পূজার ইতিহাস
কালী পূজার ইতিহাস
জানতে হলে আপনাকে আগে জানতে হবে কালী পূজাটা কিভাবে এসেছে? আদিম যুগ থেকে প্রথা
হিসেবে চলে এসেছে দেবীকে সন্তুষ্ট করতে পশুর রক্ত পরশু বলি করে উৎসর্গ করতে হয়।
এছাড়াও হিন্দু ধর্মীয় ধর্ম বলিদের প্রসাদ হিসেবে লুচি অথবা নানা ধরনের ফল খেতে
দেওয়া হয়।
আরো পড়ুনঃ শরীরের ওজন কমানোর সহজ উপায় সম্পর্কে জানুন।
হিন্দু ধর্ম বলিদের মধ্যে কার্তিক মাসে ঘোর অমাবস্যায় আলোয় সাজিয়ে তোলা হয়
হিন্দু শহর গুলোকে। অনেকটাই আনন্দের সাথে কালী পূজা পালন করা হয়ে থাকে। হিন্দু
ধর্মে প্রচলিত আছে কালই হচ্ছে শক্তির দেবী। কালী পূজার ইতিহাস এর মধ্যে কাল
শব্দটির অর্থ হচ্ছে সময়।
কোন কোন সময় এটাকে রংও বোঝানো হয়ে থাকে। যেমন কৃষ্ণ বর্ণ। কালির নাম কালনা হয়ে
কালি হল এ কারণে যে শিবের ওপর নাম কাল। কালি হচ্ছে কালের স্ত্রীলিঙ্গ। তাহলে
এখানে বলা যায় কাল হচ্ছে শিব আর তার স্ত্রী হচ্ছে কালী।
পাঠা বলির ইতিহাস
পাঠা বলির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে আগে জানতে হবে মা কালী ও কালী দেবীর
সম্পর্কে। গালি সবসময় উলঙ্গই থাকতেন। তাই গালি দিনের বেলা বের হতো না। তার রাতের
বেলায় বের হতে অথবা ঘুরতে ভালো লাগতো। কালি একদিন রাতের বেলায় বনের মধ্যে ঘুরতে
গেছিল। ঘুরতে ঘুরতে দেখে সকাল হয়ে গেছে।
এ সময় যদি কালকে উলঙ্গ কেউ দেখে ফেলে তাহলে সে তো লজ্জায় পড়ে যাবে। তখন কালি
চিন্তা করল সে কি করবে? তাকে তো সবাই দেখে ফেলবে! হঠাৎ কালি দেখতে পেল এক যুবক
ছাগলের পাল নিয়ে যাচ্ছে। তখন কালি ছাগলের রূপ ধরে ছাগলের পালের মধ্যে ঢুকে গেল।
তখন সেই ছাগল পালের মধ্যে এক পাঠা একটা নতুন ছানি দেখে উত্তেজিত হয়ে সেই পাঠা
কালি রুপি ছাগির সাথে সঙ্গম করে ফেলল। তখন ছাগী রুপি কালি ভীষণ ক্ষেপে গেল?
ক্ষেপে গেল কারণ ওই পাঠার এত বড় সাহস যে একজন দেবীর সাথে এই আকাম কুকাম করলো
পাঠা। সুতরাং এই পাঠা কে রেগুলার কালির সামনে বলি দিতে হবে। এইভাবেই কালি পূজায়
পাঠা বলির
নিয়ম চলে এসেছে।
সূত্রঃ [কালিকাপু রানঃ অধ্যায়- ১৩ পাঠা বলি খন্ডঃ ভুবনমোহন চট্টোপাধ্যায়ঃ ৪র্থ
সংকলন]
ভাইফোঁটা কী
ভাইফোঁটা কী তা সম্পর্কে জানার আগে আপনাকে আগে জানতে হবে ভাইফোঁটা কবে থেকে শুরু
হয়? ভাইফোঁটা সাধারণত কালী পূজা বাদ দিওয়ালির পরেই হিন্দুদের বড় একটি উৎসব
হচ্ছে ভাইফোঁটা। কার্তিক মাসের শুরু থেকেই এই ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
বেশিরভাগ হিন্দুদেরই ভাইফোঁটা দেওয়া অথবা নেওয়া একটা বংশীয় রীতি বলে জানা
যায়।
আরো পড়ুনঃ শরীর ফিট রাখার 10 টি উপায় সম্পর্কে জানুন।
তবে এটাই একটা নাম নয় এটার অঞ্চল ভেদে বহু নাম রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায়
ভাইফোঁটা কে ডাকা হয় " ভাইদুজ" নামে। আবার কিছু কিছু জায়গায় ভাইফোঁটা কে ডাকা
হয় "ভাইবিজ" নামে। নেপাল ও দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে ভাইফোঁটাকে বলে " ভাইটিকা"
এছাড়াও অধিকাংশ অঞ্চলে এর নাম "যমদ্বিতীয়া"।
কালী পূজা পদ্ধতি
কালী পূজা পদ্ধতি জানতে হলে আপনাকে প্রথমে জানতে হবে কালী পূজার ইতিহাস সম্পর্কে।
কালী পূজা কবে এসেছে? কিভাবে এসেছে সেগুলো সম্পর্কে। প্রথমত কালী পূজা আদি যুগ
থেকে প্রচলিত রয়েছে। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে কাশীনাথ রচিত শ্যামাসপর্যাবিধি গ্রন্থে
এই পূজার সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়।
কার্তিক মাসের অমাবশ্যায় হয় দীপান্বিতা অথবা কালী পূজার উৎসব। সাধারণত আরতি এবং
পুষ্পাঞ্জলীর দ্বারা এই পূজা সম্পন্ন করা হয়। জবা ফুল, চন্দন, পুষ্প, দুধ, ও
লেখনি দোয়া ইত্যাদি কালী পূজার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত এই
উপকরণের মাধ্যমে কালী পূজা করা হয়ে থাকে। কালি শুধু জবা ফুলে সন্তুষ্ট হন।
বাসন্তী পূজা উইকিপিডিয়া
আপনারা হয়তো অনেকেই বাসন্তী পূজা উইকিপিডিয়া সম্পর্কে জানেন না। আপনারা এই
বাসন্তী পূজা উইকিপিডিয়া সম্পর্কে আমাদের এই পোষ্টটি থেকে বিস্তারিত জানতে
পারবেন। পুরাণ অনুযায়ী সমাধি নামক বৈশ্যের সঙ্গে মিলে রাজা সুরত বসন্তকালে ঋষি
মেধসের আশ্রমের দেবী দুর্গার আহরণ করে ফেলে যা পরে বাসন্তী পূজা নামে প্রসিদ্ধ
হয়।
দেবী দুর্গার প্রথম পূজারী হিসেবে চণ্ডীতে রাজা সুরতের উল্লেখ রয়েছে। বনে ঘুরতে
ঘুরতে একসময় সুরত মেধাশ্রমে পৌঁছায়। ঋষি তাকে সেখানেই থাকতে বলেন তবুও রাজা
শান্তি পান না। এর মধ্যে ঋষির উপদেশে রাজা কঠিন তপসা শুরু করেন পরে মহামায়ার
আশীর্বাদ পেতে বসন্তকালের শুল্ক পক্ষে রাজা পুজো শুরু করেন শুরু হয় এই বাসন্তী
পূজা। এরপর থেকেই বাসন্তী পূজা উদ্ভব ঘটে।
রটন্তী কালীপূজা পদ্ধতি
বিভিন্ন তিথিতে কালি দেবীর বিভিন্ন রূপের পূজা করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে একটি রূপ
হল রতনতি মাঘ মাসের চতুর্দশী অমাবসায় হয় এই রটন্তী কালীপুজো। রটন্তি শব্দটি
এসেছে রটনা শব্দ থেকে যার অর্থ হল প্রচার হওয়া এ বিশেষ দিনে দেবীর মহিমা
চতুর্দিকে রটে যায়।
আরো পড়ুনঃ ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার।
রটন্তী কালী পূজার তিথি থাকা অবস্থায় নিষ্ঠা ভরে কালী মায়ের আরাধনা করলে মা
ভক্তের ডাকে সাড়া দেন সমস্ত মন্দিরেও অনেক বাড়িতেও তাই এদিন আয়োজন করা হয়ে
থাকে বিশেষ পূজার। সাধারণত মধ্যরাত থেকে এই পূজার শুরু হয় এবং ভোররাতে এ পূজা
সম্পন্ন হয়ে থাকে আর অতি আহ্বান এবং পুষ্পাঞ্জলী মাধ্যমে পূজা সম্পন্ন করা হয়ে
থাকে।
দীপান্বিতা অমাবস্যা
দীপান্বিতা অমাবস্যা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। আবার অনেকে এটা সম্পর্কে
জানেন। যারা জানেন না তাদের জন্য এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ধৈর্য
সহকারে পড়ে নেবেন। দীপান্বিতা অমাবস্যা এর জন্য কি আসলেই অনেকে অপেক্ষা করে
থাকেন?
হ্যাঁ বন্ধুরা সারা দেশের তান্ত্রিক জ্যোতিষী সহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ অপেক্ষা করে
থাকেন এই দীপান্বিতা অমাবস্যা। দীপান্বিতা অমাবস্যা এর জন্য অপেক্ষা করে থাকার
কারণ হচ্ছে তিথিতে সাধনা করে এক দিকে যেমন সিদ্ধি লাভ করেন। এছাড়াও পরিবারের সুখ
সমৃদ্ধির জন্য দীপান্বিতা আমাবস্যা পূজা করা হয়। অলক্ষী বিদায়ের জন্য এই বিশেষ
উজার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
লেখকের শেষ কথা - দীপাবলি কেন পালন করা হয় - পাঠা বলির ইতিহাস
পরিশেষে প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলা হয় যে, পুরান মতে দীপাবলীর রাতে দেবী
লক্ষী ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাই এই সময়
দেবতাগণ চারিদিকে আলো জ্বালিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। দেবতাদের সেই দ্বীপ মালার
সমাহারি দীপাবলি হিসেবে পালন করা হয়।
আপনারা এখান থেকে জানতে পেরেছেন দীপাবলি কেন পালন করা হয়। আপনাদেরকে খুব সুন্দর
ভাবে জানানোর চেষ্টা করেছি কালী পূজার ইতিহাস সম্পর্কে এছাড়াও এখানে বিভিন্ন
ধরনের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে পাঠা বলির
ইতিহাস। এছাড়াও আমরা এখানে আলোচনা করেছি ভাইফোঁটা কি তা সম্পর্কে।
এছাড়াও এখানে কালী পূজার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং
বাসন্তী পূজা রটন্তী কালীপূজা পদ্ধতি। এবং দীপান্বিতা আমাবস্যা কি এবং কিভাবে
উদযাপিত করা হয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের এই পোস্টটি
ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট করে জানান।