পৃথিবীর সবচেয়ে নিস্তব্ধতম জায়গা কোনগুলো

পৃথিবীর সবচেয়ে নিস্তব্ধতম জায়গা কোনগুলো প্রিয় পাঠক আপনাদের উদ্দেশ্যে খুব সুন্দর একটা পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি তাই পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়ার চেষ্টা করবেন না টেনে এ পোস্টটিতে আলোচনা করা হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিস্তব্ধতম জায়গা কোনগুলো সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার আগে সূচিপত্রটি দেখে নিন তাহলে আপনার যেটা ইম্পরট্যান্ট মনে হবে সেইটা পড়তে পারবেন আশা করি বুঝতে পেরেছেন তাহলে চলুন পৃথিবীর সবচেয়ে নিস্তব্ধতম জায়গা কোনগুলো সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
নাগরিক হাজারো শব্দদূষণকে পেছনে ফেলে নিঃশব্দ কোনো জায়গায় চলে যেতে কার না ইচ্ছা করে? কিন্তু মানুষের উপস্থিতি মানেই কোলাহল। তবে পৃথিবীতে এমন বেশ কয়েকটি জায়গা আছে, যেখানে কোনো শব্দ নেই। চলুন, এমন ১০টি জায়গা ঘুরে আসা যাক।

সূচিপত্রঃ পৃথিবীর সবচেয়ে নিস্তব্ধতম জায়গা কোনগুলো

১. বিল্ডিং ৮৭, ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র

ঘরটায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে যে কেউ নিজের হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানিও শুনতে পাবেন। হাত-পা নাড়লে কিংবা হাঁটলে শোনা যাবে শরীরের হাড়ের শব্দ। আরও কিছুক্ষণ থাকলে নিজেকে বধির মনে হতে থাকবে। ২০১৫ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃশব্দ জায়গার খেতাব পাওয়া এই ঘর মাইক্রোসফট কোম্পানির সদর দপ্তরের ৮৭ নম্বর বিল্ডিংয়ের ভেতরের একটি গবেষণাকক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির রেডমন্ড শহরে এর অবস্থান।
‘শব্দরা যেখানে মরতে যায়,’—এই একটি বাক্যেই কক্ষটিকে বর্ণনা করা যায়। এটি মূলত একটি অ্যানিকোইক (আশপাশের যেকোনো শব্দ বা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের প্রতিফলন রোধ করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা কক্ষ) চেম্বার। শব্দের আনাগোনা রোধ করতে চারদিকে কংক্রিট ও লোহা দিয়ে ছয় স্তরের দেয়াল তোলা হয়েছে। সম্পূর্ণ কক্ষটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল দেড় বছর। মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইটে এই কক্ষের একটি ৩৬০ ডিগ্রি ছবি দেওয়া আছে।

২. অরফিল্ড ল্যাবরেটোরিজ, মিনিয়াপোলিস, যুক্তরাষ্ট্র

এমন একটি কক্ষ যেখানে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট থাকতে পেরেছিলেন মাত্র একজন। যেখানে বেশিক্ষণ থাকার ফলে অনেকের চেতনা লোপ পেয়েছে। আবার কারও হয়েছে হ্যালুসিনেশন। চেষ্টা করেও অনেকে ২০ মিনিটের বেশি থাকতে পারেননি। এই কক্ষের ভয়াবহ শব্দহীনতা অনেককে পাগল করে দিতে পারে। ২০১৫ সালের আগপর্যন্ত গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃশব্দ কক্ষ ছিল এই ওরফিল্ড ল্যাবরেটোরিজ। এর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে। ৩ দশমিক ৩ ফুট পুরু ফাইবারগ্লাস ওয়েজ এবং ইনসুলেটেড দেয়াল দিয়ে তৈরি এই কক্ষ ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ শব্দ রোধ করতে সক্ষম।

৩. কেলসো বালিয়াড়ি, মোহাভি মরুভূমি, যুক্তরাষ্ট্র

যত দূর চোখ যায় বালু আর ছোট–বড় টিলার ধু ধু প্রান্তর। মিলবে না প্রাণের কোনো চিহ্ন। এই পথে মানুষেরও তেমন যাতায়াত নেই। এমনকি আকাশেপথে প্লেনও ওড়ে না এই পথে। সব মিলিয়ে একেবারে শব্দহীন এক খোলা প্রান্তর। প্রকৃতির অদ্ভুত এই নিঃশব্দতা উপভোগ করতে অনেকেই ছুটে যান যুক্তরাষ্ট্রের মোহাভি মরুভূমিতে।
ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে ২০০ থেকে ৬০০ ডলার দিয়ে চাইলে যে কেউ ঘুরে আসতে পারবেন এই কক্ষ। তবে, কিছু সতর্কতাও মেনে চলতে হবে। যেমন, কক্ষে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না এবং সঙ্গে অবশ্যই কাউকে রাখতে হবে।

৪. অলিম্পিক ন্যাশনাল পার্ক, ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ৯ লাখ একর জায়গায় ৩ হাজার মাইলজুড়ে নদী এবং ঝরনা, ৬০টি হিমবাহ এবং একটি প্রাকৃতিক ল্যান্ডমার্ক নিয়ে অলিম্পিক ন্যাশনাল পার্ক। সম্পূর্ণ প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্ট সবুজ গাছপালায় ঘেরা এই বনের প্রাকৃতিক নৈঃশব্দ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে মনে হতে পারে স্বর্গীয়। বনে যেন কোনো প্রকার শব্দদূষণ না হয়, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সব সময় সচেষ্ট থাকে।

৫. কিল্ডার মিরেস, নরদাম্বারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে শান্ত স্থান কিল্ডার মিরেসের অবস্থান নরদাম্বারল্যান্ডে। ১৫ কোটি গাছে ঘেরা এই নিঃশব্দ জায়গার আয়তন ২৫০ বর্গমাইল। শহুরে হট্টগোল থেকে দূরে কোথাও গিয়ে শান্ত হয়ে বিশ্রাম নিতে এই স্থানের তুলনা নেই।

৬. ল্যান্ডমানালাউগার, আইসল্যান্ড

অসাধারণ সুন্দর এই জায়গা স্থানীয় মানুষের কাছে ‘পিপলস পুল’ নামে পরিচিত। বিশাল পাহাড়গুলোর মধ্যে বেশ কিছু আগ্নেয়গিরিও আছে। তার ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে হ্রদ। গ্রীষ্মে হাইকিংয়ের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় জায়গা। আর বসন্তে হ্রদের গরম পানিতে গোসল করতে অনেকেই চলে আসেন এখানে। প্রকৃতির অপার্থিব নিস্তব্ধতা বিরাজ করে এই স্থানে।

৭. জুরিখ, সুইজারল্যান্ড

ওয়ার্ল্ড হেয়ারিং ইনডেক্সের ২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী সুইজারল্যান্ডের জুরিখকে সবচেয়ে নিঃশব্দ শহর বলা যায়। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা মোতাবেক এই শহরের ৫০টি জায়গায় একেবারেই শব্দদূষণ নেই।

৮. মাকগাডিকগাদি পানস, বতসোয়ানা

পৃথিবীর সবচেয়ে লবণাক্ত জায়গাগুলোর একটি। জায়গাটি আয়তনে ৩ হাজার ৯০০ কিলোমিটার। এর অবস্থান উত্তর-পশ্চিম বতসোয়ানার মরুভূমির প্রান্তরে। প্রাণের দেখা এখানে পাওয়া যায় না বললেই চলে। গাছপালাও নেই। বেশ কিছু গবেষণা দাবি করে যে দুই লাখ বছর আগে এই স্থানে আধুনিক মানুষের চলাচল ছিল। তবে এখন জায়গাটি একেবারেই জনমানবশূন্য।

৯. অ্যান্টার্কটিকা

পুরো মহাদেশটাই বরফে ঢাকা। কোনো দিন এখানে ঠিকঠাকমতো হয়ে ওঠেনি মানুষের বিচরণ। প্রাণীদের বিচরণও বেশ সীমিত। পেঙ্গুইন, সিল, তিমি, বড় বড় টুনা মাছ আর বেশ কয়েকটি প্রজাতির বাসস্থান অ্যান্টার্কটিকা। বাকি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন, নিঃশব্দ এই পুরো মহাদেশ।

১০. তাক বি হা সেনোট, মেক্সিকো

ইউকাটান উপদ্বীপে পানির নিচে বেশ কয়েকটি গুহা আছে। এগুলোর ভেতর পানির টপটপ শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ শোনা যায় না। মেক্সিকোর গাঢ় নীল পানির এই দুনিয়ায় বিরাজ করে শব্দহীন পরিবেশ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url